শীত এলেই সবচেয়ে আগে যে জিনিসটি আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলে তা হলো ত্বক ও ঠোঁট। ঠান্ডা বাতাস, কম আর্দ্রতা আর ঘরের হিটার বা ফ্যানের শুকনো পরিবেশ – সব মিলিয়ে ঠোঁটের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়ে যায়।
ফলে ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে যায়, জ্বালাপোড়া করে, এমনকি অনেক সময় রক্তও বের হয়।
কিন্তু একটু যত্ন নিলেই এই সমস্যা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব। আজ জানবো —
✅ কেন ঠোঁট ফাটে
✅ শীতে ঠোঁটের যত্ন কিভাবে নিতে হবে
✅ এবং কোন প্রোডাক্টটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে
কেন ঠোঁট ফাটে?
আমাদের ঠোঁটের ত্বক শরীরের অন্য অংশের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা ও নাজুক। ঠোঁটে তেল উৎপাদনকারী সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড নেই, তাই এটি নিজে থেকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে না।
শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে গেলে ঠোঁটের প্রাকৃতিক ময়েশ্চার দ্রুত উবে যায়।
এর পাশাপাশি আরও কিছু কারণ ঠোঁট ফাটার পেছনে দায়ী—
- শীতের শুকনো ঠান্ডা হাওয়া: বাতাসের কম আর্দ্রতা ঠোঁটের জলীয় অংশ কেড়ে নেয়।
- অতিরিক্ত ঠোঁট চাটা: অনেকে ঠোঁট শুকালে জিভ দিয়ে চেটে নেয়, এতে আরও দ্রুত ঠোঁট ফেটে যায় কারণ লালার এনজাইম ঠোঁটকে শুষ্ক করে দেয়।
- পানি কম পান করা: শীতে আমরা সাধারণত কম পানি খাই, ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়।
- অতিরিক্ত ম্যাট লিপস্টিক বা কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার: ঠোঁটের ত্বককে আরও রুক্ষ করে তোলে।
- ভিটামিনের ঘাটতি: বিশেষ করে ভিটামিন বি, সি, ও ই এর অভাবে ঠোঁটের শুষ্কতা বাড়ে।

ঠোঁট ফাটা রোধে যা যা করা উচিত
১️. দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শীতকালেও প্রতিদিন অন্তত ৬–৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। শরীর হাইড্রেটেড থাকলে ঠোঁটও ভিতর থেকে নরম ও হেলদি থাকে।
২. ঠোঁট চাটা বন্ধ করুন
এটি ঠোঁট ফাটার সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি। জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটলে তা মুহূর্তে ভিজে গেলেও শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যায়।
৩️. লিপ বাম বা লিপ মাস্ক ব্যবহার করুন
দিনে অন্তত ২–৩ বার লিপ বাম লাগান। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে একবার অবশ্যই। এতে ঠোঁট সারারাত ময়েশ্চারাইজড থাকবে।
৪. ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা বজায় রাখুন
যদি ঘরের বাতাস বেশি শুকনো হয়, তাহলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন। এতে ঠোঁট ও ত্বক উভয়ই ভালো থাকবে।
৫. লিপ স্ক্রাব ব্যবহার করুন
সপ্তাহে ২ বার হালকা লিপ স্ক্রাব দিয়ে ঠোঁটের মৃত কোষ তুলে ফেলুন। এতে ঠোঁট মসৃণ থাকবে এবং বাম বা মাস্ক আরও ভালোভাবে কাজ করবে।
৬️.ভিটামিনযুক্ত খাবার খান
ফল, সবজি ও বাদামে থাকা ভিটামিন বি, সি এবং ই ঠোঁটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
বিশেষ করে কমলালেবু, ডিম, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার ঠোঁটের জন্য উপকারী।
বাড়িতে তৈরি সহজ লিপ কেয়ার টিপস
যদি কখনো লিপ বাম শেষ হয়ে যায়, তাহলে কিছু ঘরোয়া উপায়েও ঠোঁটের যত্ন নিতে পারেন:
- মধু ও চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন – ঠোঁটের মৃত কোষ দূর করবে।
- নারিকেল তেল বা ঘি লাগান – প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে।
- শসার রস ঠোঁটে লাগান – ঠোঁট ঠান্ডা ও নরম রাখবে।
তবে এগুলো অস্থায়ী সমাধান। গভীর ময়েশ্চার ও রিপেয়ার চাইলে ভালোমানের একটা Lip Sleeping Mask ব্যবহারই সবচেয়ে ভালো সমাধান।
প্রোডাক্ট সাজেশন: Laneige Lip Sleeping Mask

শীতকালের ঠোঁট যত্নে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কার্যকর প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে একটি হলো Laneige Lip Sleeping Mask।
এটি শুধু লিপ বাম নয়, বরং একটি ইনটেন্স লিপ ট্রিটমেন্ট, যা সারারাত ঠোঁটকে রিপেয়ার ও রিস্টোর করে।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
- ঘুমানোর আগে ঠোঁট পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন।
- এরপর Laneige Lip Sleeping Mask সামান্য পরিমাণে আঙুলে নিয়ে ঠোঁটে পাতলা করে লাগান।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে নরম কাপড় বা টিস্যু দিয়ে হালকা করে মুছে ফেলুন।
উপকারিতা:
- ঠোঁটের শুষ্কতা ও ফাটা জায়গা দ্রুত সারিয়ে তোলে।
- ঘুমের সময় ঠোঁটে একটি হাইড্রেটিং লেয়ার তৈরি করে যা সারারাত ময়েশ্চার লক করে রাখে।
- নিয়মিত ব্যবহার করলে ঠোঁট হয় নরম, উজ্জ্বল ও পিংকিশ।
- এতে আছে Vitamin C ও Berry Mix Complex™, যা ঠোঁটের ডার্কনেস কমিয়ে দেয়।
- এর টেক্সচার হালকা ও নন-স্টিকি, তাই ব্যবহারেও আরামদায়ক।
এটি বিশেষ করে শীতকালের জন্য পারফেক্ট লিপ কেয়ার সল্যুশন, কারণ দিনের ঠান্ডা ও শুকনো বাতাসে হারানো আর্দ্রতা এই মাস্ক সারারাত ধরে পুনরুদ্ধার করে।
অতিরিক্ত টিপস:
- খুব ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করার আগে লিপ বাম লাগিয়ে বেস তৈরি করুন।
- ঠোঁটে কখনো টুথপেস্ট, লেবু বা অন্য অ্যাসিডিক কিছু লাগাবেন না – এতে ঠোঁট জ্বলে যেতে পারে।
- ঠোঁট কামড়ানো বা খোসা টেনে তোলা থেকে বিরত থাকুন।
উপসংহার
ঠোঁট আমাদের মুখের সবচেয়ে কোমল ও আকর্ষণীয় অংশগুলোর একটি।
কিন্তু একটু অবহেলায় তা রুক্ষ, ফাটা ও নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে।
তাই শীতকাল এলেই ঠোঁটের যত্ন নেওয়া শুরু করুন—
১। পর্যাপ্ত পানি পান করুন,
২। নিয়মিত লিপ বাম ব্যবহার করুন,
আর রাতে ঘুমানোর আগে Laneige Lip Sleeping Mask লাগিয়ে নিন।প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট সময় দিলেই শীতের কনকনে হাওয়া ঠোঁটের হাসি কেড়ে নিতে পারবে না—
বরং ঠোঁট থাকবে নরম, মসৃণ আর চিরতরুণ।